প্রকাশিত: ২০/১১/২০১৬ ৯:০৭ এএম , আপডেট: ২০/১১/২০১৬ ৯:০৮ এএম

bodiডেস্ক রিপোর্ট::

সম্পদের হিসাব বিবরণীতে তথ্য গোপনের মামলায় কক্সবাজার-৪ ( উখিয়া-টেকনাফ) আসনের ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি’র তিন বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। আদালত থেকে দণ্ডিত হওয়ায় পর বদির এমপি পদে থাকা না থাকা নিয়ে শুরু হয়েছে সর্বত্র বিতর্ক। মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। কেউ কেউ বলেছেন, ওই সাজার বিরুদ্ধে তার আপিল করার অধিকার রয়েছে। তাই আপিলের ফল না আসা পর্যন্ত তিনি সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন এটা বলা যাবে না। আবার কেউ কেউ বলেছেন, সাজা দেয়ার পর বদিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি এখন সাজা ভোগ করছেন। এ কারণে তিনি সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত সংসদে তার সদস্য পদ বহাল থাকবে বলে জানিয়েছেন বদির আইনজীবীরা।

সাজার রায় ঘোষণার পর সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বদির সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, নৈতিক স্খলনজনিত কোন ফৌজদারী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে সংসদ সদস্য পদে থাকার অযোগ্য হবেন।

সম্পদের হিসাব বিবরণীতে তথ্য গোপনের অভিযোগে গত ২ নভেম্বর তিন বছর কারাদণ্ড দেন ঢাকার একটি বিশেষ জজ আদালত। তবে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে বদিকে খালাস দেয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায় থেকে খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই আপিল দায়ের করা হয়। আপিলে বিচারিক আদালতের খালাসের রায় বাতিল চাওয়া হয়েছে।

এছাড়া একই দিন সম্পদের তথ্য গোপনের মামলায় বদিকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করে দুদক। আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান এ আবেদন করেন।

সরকারী দলের আলোচিত-সমালোচিত এমপি আব্দুর রহমান বদি দণ্ডিত হওয়ায় সংসদ সদস্য পদ হারিয়েছেন-এমন অভিমত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবীর। দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, সাজার রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে উনার সংসদ সদস্য পদ আর নেই। সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুযায়ী সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত হাইকোর্ট তার সাজার কার্যকারিতা স্থগিত না করবেন ততক্ষণ তিনি আর সংসদ সদস্য নন।

এ ব্যাপারে আইন ও বিচারমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে বদির উচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ রয়েছে। উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগের রায়ই চূড়ান্ত। সে রায়ে যদি তার সাজা বহাল থাকে তা হলে সংবিধানের ৬৬ (২) এর (ঘ) উপধারার মতে তার সংসদ পদ বাতিল হবে। তবে এটি সময়ের ব্যাপার। যতক্ষণ না উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগে চূড়ান্ত রায় হচ্ছে, ততক্ষণ তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হচ্ছে না। সেখানে তিনি যদি খালাস পান তা হলে তো পদ যাওয়ার কোনো প্রশ্ন নেই। তবে তিনি যদি নিজে পদত্যাগ করেন তাহলে অন্য ব্যাপার।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সিনিয়র আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার বলেছেন, ‘দু’বছর সাজা হলে ৬৬(২)(ঘ) অনুযায়ী অযোগ্য হয়ে যায়, কিন্তু কিছু কিছু আইনগত প্রক্রিয়া রয়েছে। তিনি যদি এখন হাইকোর্টে আপিল করেন এবং তার সাজার কার্যকারিতা যদি স্থগিত হয়ে যায়, তাহলে তার ক্ষেত্রে ওই অনুচ্ছেদ প্রযোজ্য হবে না।

তিনি আরও বলেন, ‘বদি সাজা ভোগ করলেও তার ক্ষেত্রে সংসদ সদস্য যাওয়ার বিধান কার্যকর হবে না। কারণ আইনে তার আপিল করার অধিকার রয়েছে। আপিল করার পরেও যদি সাজা বহাল থাকে তখন তিনি অযোগ্য হবেন। তাও ৬৬(২)(ঘ) অটোমেটিক্যালি প্রয়োগ হবে না। ওই বিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন প্রক্রিয়া শুরু করবে এবং সংসদ সিদ্ধান্ত নেবে।’

সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, আবদুর রহমান বদির তিন বছরের সাজা হয়েছে। তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি এখন সাজা ভোগ করছেন। তাই সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কারাগারে পাঠানোর মুহূর্ত থেকে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে অযোগ্য হয়ে পড়েছেন। তিনি আর এখন সংসদ সদস্য নন।

সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, নিম্ন আদালতের সাজার বিরুদ্ধে বদি হাইকোর্টে আপিল করেছেন। আপিল বিচারের একটি চলমান প্রক্রিয়া। আইনে তার আপিল করার অধিকার রয়েছে। আপিল করার পরও যদি তিনি সাজার ওপর স্থগিতাদেশ না পান তাহলে তিনি সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা হারাবেন।

সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান বলেন, রায়ের পর এখন তিনি (বদি) আর সংসদ সদস্য পদে থাকতে পারেন না। এখন তিনি এ পদে অযোগ্য।

বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, এটা আপিলের বিষয়। আপিলে যদি আবার স্থগিত হয়ে যায়, সর্বশেষ আইনগত যুদ্ধ যেটা আমরা বলি অর্থাৎ আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত এটা কিছু করা যাবে না।

তবে আপিলের আগেই নৈতিকতার প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বদি নিজে অথবা তার দল ব্যবস্থা নিতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নৈতিকতার ব্যাপার আছে এখানে। নৈতিকতার কারণে এর ফয়সালা দুইভাবে হতে পারে, সে নিজে পদত্যাগ করতে পারে, আবার তাকে দল থেকে পদত্যাগের কথা বলা হতে পারে। কিন্তু আইনগত দিক থেকে বিবেচনা করলে এখানে আপিলের সুযোগ আছে এবং সর্বশেষ চূড়ান্তভাবে সাজা বহাল না থাকা পর্যন্ত তার সংসদ সদস্য পদ থাকবে।

নৈতিকতার প্রশ্নে এর আগে বর্তমান মন্ত্রিপরিষদের একাধিক মন্ত্রীর ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া জায়ামাত নেতা ও একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর আপিলের রায়ের আগে প্রধান বিচারপতি ও বিচার বিভাগ নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দিয়ে দণ্ডিত হয়েছিলেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ চলতি বছর ২৭ মার্চ তাদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ৭ দিনের কারাদণ্ড দেন। তখনো অনেক সংবিধান বিশেষজ্ঞ দুই মন্ত্রীর পদে থাকা নিয়ে নৈতিকতার প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন। তবে দণ্ডিত হওয়ার ছয় মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও তারা মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করছেন।

একইভাবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া দুর্নীতির মামলায় নিম্ন আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ১৩ বছর কারাদণ্ড পেয়েছিলেন। হাইকোর্ট সেই সাজার রায় বাতিল করেছিলেন। তবে হাইকোর্টের সেই রায় আপিল বিভাগ বাতিল করে দেন। তাই তার পুরনো সাজা বহাল হয়। তবে তিনি মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তার ক্ষেত্রে আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে দণ্ড স্থগিত থাকার যুক্তি দিয়েছেন সরকারপক্ষের আইনজীবীরা। একই রকম যুক্তি তারা দিচ্ছেন বদির ক্ষেত্রেও। বদি সবেমাত্র দণ্ডিত হলেন, এরপর আপিল করলে সেই আপিলের রায়ের পরই তার সংসদ সদস্য পদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।

তবে সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে- নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে এবং তার মুক্তি লাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হয়ে থাকলে তিনি সংসদ সদস্য হওয়ার থাকার অযোগ্য হবেন। সুতরাং রায় ঘোষণার পর বদির উচিত সংসদ সদস্য পদে ইস্তফা দেয়া। কিন্তু বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরনের উদাহরণ দেখা যায় না। এখানে অপরাধ করেও এমপি-মন্ত্রীরা নিজ পদে বহাল থাকেন, তারা নৈতিকতার ধার ধারেন না- এমন মন্তব্য সংবিধান বিশেষজ্ঞদের।

সূত্র-পূর্ব পশ্চিম।

পাঠকের মতামত

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ট্রাকের ধাক্কায় নিহত ১

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাতকানিয়ার ঠাকুরদিঘি এলাকায় লবণবাহী ট্রাকের ধাক্কায় এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম ...

জাসদ কার্যালয়ের জায়গায় ‘শহীদ আবু সাঈদ জামে মসজিদ’ নির্মাণের ঘোষণা

বগুড়া শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথা সংলগ্ন এলাকায় বৃহস্পতিবার রাতে ভেঙ্গে ফেলা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) ...

বাড়ছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, আটক ৩৩

বান্দরবানের আলীকদম সীমান্তে বাড়ছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সংখ্যা। আজও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকালে শিশুসহ ৩৩ মিয়ানমারের নাগরিককে আটক ...